আজ প্রখর তাপ,
শাল পিয়ালের বন শুকিয়ে হয়েছে কাঠ,
রাতের ঘোমটা কাটানোর সময়টা,
প্রথম রবিরশ্মির তখনও হয় নি দেখা,
ভোরপাখির মিষ্টি কিন্কিনী কুহুতান,
সেই সময় ডাকি আমি আমার মনের আপন প্রাণ,
সবার মাঝে ভাল থাকুক দিল দরিয়ার এই দান।
Category: Uncategorized
সুপ্ত ইচ্ছেগুলি
সুপ্ত ইচ্ছেগুলি বাক্সবন্দী রেখেছি,
সবই সামান্যই সাধারন,
অপূর্ণ রইবে জানি,
পার্সেল করে পাঠিয়ে দিলাম,
ঠিকানাটা তোমার লিখেছি।
ভালোলাগাটা একটু অন্যরকম জেনেছি,
তোমার থেকে, নতুন করে দেখা,
অন্য মনোভাব দিয়ে,
একা নয় একসাথে বসা,
নীরবে হাতখানি ছুয়ে।
ভাল লাগে বেশ গুনতে,
রাতের কালো আকাশে মিটমিটে তারা,
সমুদ্র তীরে ঢেঊগুলি পড়ে আছড়ে,
শীতকালে স্লো মোশনে পড়া পাতা।
বাক্স পেলে রেখ মনের আলমারি,
লাগবে তোমার কখনো বৃষ্টি পরা সন্ধ্যায়,
খুলে দেখ ভিতরে সাধারণ ইচ্ছেগুলি,
ভাললাগাটা যে একইরকম সবাই চায়।
কোথায় পাব তারে
খুজে বেড়াই তারে আমি আমার মনের মানুষ সে যে,
শহর গায়ের পথে পথে কলাবাগানের পুকুর ঘাটে,
শিউলি যুইয়ের নুয়ে থাকা লতানে পাতার মাঝে,
জোতস্না রাতে মৌ ফুলের ম ম গন্ধের সুবাসে,
খুজে বেড়াই তারে নদীর নোনা বালির চড়ায়,
যেথায় শীর্ণকায় জলধারা আপন মনে ধায়,
ফরিং নাচে তিরিতিরি ধানের শিষের মাথায়,
ঠিং ঠিংগে বকগুলি গরুর পিঠে দাড়ায়,
খুজে বেড়ায় মন আলের পথের উপর তারে,
কেউ তো আছে যে চলছে পথ দিয়ে আগে আগে,
কত চেয়েছি কত কেদেছি কত হেসেছি তারে পাব বলে,
কাকতাড়ুয়া ভাংগা দাতের ফাক দিয়ে ফিক করে ফেলে,
কোথায় খুজে বেড়াস তোর মনের মানুষ কে যে,
সে তোর লুকিয়ে আছে তোর মনের ভিতর সে যে।
মন আমার
আমি যদি না হতেম আমি,
উড়তাম বেলুন দোলায় আকাশে,
মেঘের সাথে খেলতাম লুকোচুরি,
কথা আমার ভেসে আসত বাতাসে।
আমার যদি না থাকত ঘর বাড়ি,
হতাম কোন বইয়ের মলাটে লেখা,
দেরাজে গুছিয়ে রাখা বই সারি,
দেখতাম তার সন্সার পুতুল খেলা।
মনটা আমার কখনো কাছে থাকেনা,
পালিয়ে বেড়ায় খোলা মাঠের ঘাসেতে,
আসবে কেউ সারাদিন করে অপেক্ষা,
দিনশেষে শরীরফেরতা স্বপ্ন দেখতে।
অনুশোচনা
ছোটো ছেলেটি সাগরতীরে ছিল অনেকক্ষন,
বয়স তার হবে ছয় কিংবা সাত,
নিশ্চুপ দাড়িয়ে,
ঢেউগুলি খেলায় মত্ত তখন,
তাকিয়ে ছিল অস্তাচলের দিকে অবাক।
ফেনাগুলি যেন বার বার এসে ফিরে,
ধুইয়ে ছোটো ছোটো দুই কমল চরন,
কোন এক অজানা শক্তি আছে ঘিরে,
শিশুটির সমস্ত অবয়ব করে আভরণ।
কৌতুহলি আমি গিয়ে উপস্থিত তার পাশে,
চাপা স্বরে শুনি আনমনা শিশুর কিছু কথা,
“যতই পা ধর আমার, করব না ক্ষমা তোমাকে,
ফিরিয়ে দিতে হবে তোমায়,
আমার বাবা মা।”
আশার শক্তি
ছোট্ট পাখিটা চড়ুই কি বুলবুলি,
সকাল থেকে যাচ্ছে দেখছি কুড়িয়ে
শুকনো ডালপালা কত কি কুটিকুটি
কদমগাছটার মাথায় গেল সে নিয়ে।
যত্ন করে বাধল ডগায় বাসাটা,
একা একা সাজালো ভিতর ঘর
শক্ত ভেজা ডালে পাতায় ঢাকা,
নিচে পড়বার নেই কো কোনো ডর।
সেই গাছে কোঠরে এক কাঠবিড়ালি,
দৌড়ায় এখানসেখান সারাদিন উপরনিচ,
পেয়েছে যে সে এক কোঠাবাড়ি,
লেজ টা উড়িয়ে ডাকে কিচিরমিচ।
ব্যাস্তবাগীশ গাছের পাতাগুলি
আপনমনে দোদুল দুলে হাওয়ায়
কি পাবার আশায় করে ছোটাছুটি,
জীবনচক্রের অদ্ভুত লীলা খেলায়।
সকাল গিয়ে বেলায় পরে সন্ধ্যা
আশার ছলে সবাই পথে ফিরে,
কেউ বা থাকে বিজন ঘরে একেলা,
জানালা খুলে একটু আলোর তরে।
আশা নিয়ে বেচে থাকা সবাই,
বরফপাহাড়ও করে অপেক্ষা
প্রতি উষায় রবির উষ্ণ চুম্বনের,
তৃণ যেমন অশ্রুর তরে করে প্রতিক্ষা।
যদিও থাকি দূরে
অনেক দূরে থাকি আমি,
চাঁদ তারা যেমন থাকে,
ওই দূরে থেকে দেখি আমি,
বাদামী আখিতে যখন অশ্রু ভাসে।
দিনের আলোয় দেখ নি কখনো,
আমি কিন্তু থাকি পাশে,
গভীর রাতে তুমি যখন স্বপ্ন দেখ,
পাহারাদার আমি দাড়িয়ে।
শোয়ার আগে দুটি মিষ্টি,
মনের কোণে আনো যদি,
আকাশপানে যদি তাকাও,
মিটিমিটি হাসছি আমি।
আসবে বলে
ভেজা পাহাড়ের মাথার উপর
রবি উঠেছে ওই,
ঝলমলে রোদ ছড়িয়ে
নীল আকাশ ভরালো সই।
জগৎ যেন ঝর্ণার ধারা,
আলো উৎসবে মাতোয়ারা,
বাতাস ভরা পাখির ডাকে,
ফিরিয়লা হাল্কা হাকে,
ছুটির মেজাজ টা পড়ল বলে,
এখনই সবাই ঘুমে ঢলে।
হিমেল হাওয়ার পরশ লাগে,
শিউলি ফুলের গন্ধ ভাসে,
বাপের বাড়িতে আসবে বলে,
পৃথা যেন আজ করছে ঝকমকে।
স্লেট
তোমার আমার পরিচয়,
বহুযুগ ধরে,
তুমি মানো বা না মানো
এই চিন্তাধারা চলেছে।
তুমি যখন বই পড়,
উপুর হয়ে চোখে চশমা,
বইয়ের পাতার লাইন ধরে,
একটার পরে একটা অক্ষর,
পড়ে যাও সময় করে,
আমি তোমার মনের ভিতর,
কালো স্লেট,
লিখে যাও অক্ষর গুলি,
তৌরী হয় শব্দ,
তারপরে তার অর্থ বোঝ তুমি।
আমি দেখি তুমি হাস,
কখনো মন হয় বিষাদ,
আমি সেই স্লেট,
বুঝি তোমার চিন্তন,
তারপরেই তুমি আচল দিয়ে,
মুছে দাও লেখা গুলি,
নতুন করে কিছু ভাবনা লেখার,
আমি কালো, তাই তুমি যা বল,
আমি সব শুনি পুরোটাই,
তোমার সাথে আমি হাসি কাদি,
আমি যে তোমার মনের আধখানা টাই,
তাই বলি আমি ছিলাম গতকাল,
আমি আছি এখন,
আমি থাকব আগামীকাল,
সবসময়, তোমার সাথে,
তুমি মানো বা না মানো,
আমি তোমার মনের স্লেট।।
শেষ পাতাটি
পাছে তোমায় ফেলি ছুয়ে,
তাইতো সদা দূরে থাকি,
ভুলে কিছু দিলে প্রিয়ে,
আপন করে তুলে রাখি।
তোমার বাগানে আছে সাজানো,
গোলাপ, বেলি, জুই, দোপাটি,
তারই মাঝে এসেছি কখনো,
আমি এক অজানা আগাছাটি।
দেখি তোমায় রোজ সকালে,
স্নানটি করে শুভ্র বসনে,
এসে দাঁড়াও গোলাপের সামনে,
ভালবাসাটি দাও উজাড় করে।
আপন মনে গুনগুনিয়ে
কাকনের তালের বোলে,
মন ভোমরার গানের সুরে,
ভিজিয়ে দিলে সেই জনেরে।
পড়ল যদি কিছু ছিটেফোঁটা,
আমার ‘পড়ে দূরে থেকে,
পাপড়ির গভীরে রইলো জমা,
আচলে কখনো নিয়ো গো তুলে।
আমার ভালবাসাতে নাই চঞ্চলতা,
নাই এতে সুবাস রঙের বাহার,
পথ তোমার শুধু মসৃণের আশা,
শেষ পাতাটি বিছিয়ে দেবার।