এক চিলতে রদ্দুর ঝাপিয়ে পড়ে রোজ,
আমার মুখের উপর,
জানালার কড়িকাঠের ফাক দিয়ে,
সেই আলো, যাতে নেই আমার অধিকার,
অল্প উষ্ণ কিছু শীতল, পাখির ডাকের মত,
দূর করে ক্লান্তি, আনে নুতন আশা,
আর একদিন দেখা দেবে বলে দেয় প্রতিশ্রুতি,
ওই কিছুক্ষন,
তারপরে রয়ে যায় তার উষ্ণতার রেশ,
ডায়েরীতে লিখে রাখি সময়টা,
আবার ফিরবে কি না কে জানে,
মনখারাপের বৃষ্টি পড়লে খুলব মাঝে,
মনে পড়বে সময়টা যখন এসেছিল একদিন একসময়।।
Author: gautammridha
শেষ ইচ্ছে
আসা যাওয়া পথের ধারে,
আমার কুটির খানি,
উঠোনখানিতে বেঞ্চিপাতা
টেবিল দুটি খালি,
পথিক আসে, কেউ যায় কেউ দাঁড়ায়,
আমি বসে থাকি উনুন জ্বালায়,
চলার পথে কেউ বা যদি আসে,
এক কাপ চা দিতাম তাকে,
ক্ষনিকের ত্বরে শুনতাম কথা,
জীবনের সুখ মেটাতে কিছু ব্যাথা।
আপন তরীতে ব্যাস্ত সবাই,
মন খুলে কথাবলার সময়ও নাই,
তারই মাঝে একজন আছে,
দূরেই থেকেও সে যে কাছে থাকে,
মিষ্টি কথায় মন ভরিয়ে দেয়,
আপন করে জীবন রাংগিয়ে দেয়,
ইচ্ছে মোর নিয়ে যাই তারে উত্তরমেরু
একসাথে বসে দেখব দুজনে সবুজ মেরুন রামধনু,
চা এর কাপে চুমুক দেব,
নিঃশব্দ ধ্বনি শুধু শুনব,
মিটমিটে তারাগুলি হাসবে যখন
একসাথে গুনব তাদের তখন
দেখব শুধু আধারে আলো,
এই জীবনের সবশেষ ভালো।
বিকেলে চায়ের কাপ
খুব ইচ্ছে করে বসে থাকি পাশে,
সামনে টি পয়,তাতে গরম চা,
চিনেমাটির কাপ থাকবে দুটি,
চিনি আর দুধের পাত্র আলাদা,
পশ্চিমে পড়ন্ত সুরজ্য ঢলে পড়ল বলে,
শির শির করে উড়বে বাতাস,
পাখিরা যাবে ঘরে ফিরে।
তোমার মাথায় একটা চাদর চাপা,
গোধুলির রংগে জ্বলছে নাকছাবিটা,
আছ বেশ দিনের শেষে,
এখনো যে অনেক দূর হবে যেতে।
ভাবি বসে, কি ভাবছ তুমি মনে,
এলোমেলো কত কি যেমনটি ঘোরে,
আমার মনে,
নিটোল হাতে ঢেলে দিলে চা টা,
ওইটুকু সময় আমার জন্য,
চা যেন না পড়ে কাপের বাইরে,
হাত বাড়িয়ে দিলে কাপটা,
বললে তখন,
“চা টা নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে”
ফিরে এলাম আবার,
ধূসর চশমার ফাক দিয়ে দেখি,
তোমার একচিলতে সাদা চুল কালোর মাঝে,
সরু জলের ঝরনা পড়ছে কালো পাহাড় দিয়ে।
সৌরভ
কহে পুরুষ,
দাম্ভিকতার মাঝেই রয়ে যে
পুরুষের গৌরব মান,
সভ্যতার আলোর প্রদীপে
তাই দেখ শত পুরুষের নাম,
নারী কহে,
লক্ষ নারীর নারীত্ত তে
জ্বলে আলোর শিখা
,হয়তো বোঝনা তুমি সেই আলোর উষ্ণতা,
নারীর সুন্দরতা নয় শুধু পুরুষের বাহুডোরে,
দেখেছে কি তার প্রকাশ,
যখন সে ফুল তুলে রাখে মাথে,
জল ভরা কলস নিয়ে চলেছে কাখে,
কোলে বসে তারই কচি শিশুটি,
ভবিষ্যতের বাণী নিয়ে এসেছে যে আশাবাদী,
মুখে হাসি সদা, ব্যাপ্ত করে তার সৌরভ,
সন্তানের গৌরবেই মাতৃকার গৌরব।
সুধাকলস
বসে ছিলাম বুতিনের পাশে,
না উঠে যায় চমকে পাছে,
এলোমেলো চিন্তা আসে মাথায়,
নানানরকম সুর তাল পাকায়,
সবাইয়ের ভিতর আছে এক কলসি,
জল ভরা নয়, ভরে যায় আপনি আপনি,
ছোটো থেকে তুমি যা পাও যত স্নেহ মমতা,
মাটির কলসে জমা থাকে সেই সব ভালবাসা,
ধীরে ধীরে তুমি বড় হলে, নানা রংগে রং লাগালে,
কলস কিন্তু থাকে সেই এক,
মা বাবা ভাই বোনের ভালবাসার ব্যাগ,
তুমি হয়ত ঘর বসালে,
সুন্দর সাজে বাইরের ঘর সাজালে,
মনের ভিতরের কলসের সুধারস,
সে যে সাজায় তোমার অন্তরের যশ,
তাই তে প্রকাশ তোমার ভিতর বাহির,
যে তোমায় করেছেন এই অমূল্য দান,
তাদের মনে মনে করে দিও প্রণাম,
তুমি সুন্দর,তুমি যে আলোর ঝর্ণা,
তাই তো তোমায় নিয়ে এই কল্পনা।
দিনশেষে
সারাদিন পরে এই আমার সময়টা
যখন দিনশেষের বাজে ঘড়ির ঘন্টা,
ক্লান্ত দেহর উপর এলিয়ে পরে তার ছায়া,
আকাশ পরদায় জ্বলে হাজার দিয়া,
সময়টা বড়ই মধুর আমার কাছে,
কয়েক মুহূর্ত শুধু তুমি থাক পাশে,
জানিয়ে যাও আবার সকাল হবে,
দিনের চেয়ে রাত সুখের রবে,
তোমার মুখ চেয়ে তাই শুতে চলি
যদি তুমি আস ফিরে হয়ে সপনের পরী,
ঘুম পাড়িয়ে নিঃশব্দে সরে চল যাও কখন,
“ভালবাসি বলে” কপালে মিঠি একে দাও যখন।
অন্তমিল
রাস্তায় দাড়িয়ে ফল কিনছিল,
দুইহাতে ঢাউস আকারে দুটি ব্যাগ,
পাশে ছিপছিপে একজন দাড়িয়েছিল,
তার কোলে বোধহয় ওদেরই এক ট্যাগ।
সেদিন দেখা হল বুলির সাথে,
আরে ওই মেয়েটা শ্যামলা রং,
আমাদের ফ্ল্যটে থাকতে উপরে,
গড়ন্ত গায়ে ছিল বেশ ঢং।
স্কুলে যাওয়ার সময় তাকাতো টেরিয়ে,
একটু দাড়াত হয়তো বোধহয়,
ঘার টা ঘুরিয়ে বেণি দুলিয়ে,
কিছু যেন দেখত আমায় বোধহয়।
শুনতাম ওর পড়ার ধূম ঠিক সন্ধ্যাবেলায়
ইতিহাস ভূগোল যাই বা হোক তখন,
চেচাতাম আমিও পড়াশোনা যেত গোল্লায়।
সিড়ির ‘পরে হয়েছে দেখা অনেক বার,
চোখাচোখি, ধাক্কাধাক্কি, হাসাহাসি,
তবে মনেও পরেনা আমার একবার
কথা তেমন হয়েছে কিনা কি জানি।
তবে পড়ে মনে,
প্রতিবারে নুতন জামাটি পেলে,
বারান্দায় দাড়িয়ে আমাকে দেখাতো সে,
“ভাল লাগছে” আমি জানাতাম হেসে।
রেললাইনের উপর দুটি ইঞ্জিন,
জীবনের চলার পথে চলতে গিয়ে,
চলে গেছে দুইদিকে একদিন,
মালগাড়ি লেগেছে যে যার পিছনে।
চমকে উঠে সেদিন আমায় দেখে,
চোখেমুখে ভেসে উঠেছিল পুরানো সেই আকূতি,
কোনো কথা ছিল না মুখে,
মনে হল বলল যেন “কেমন আছিস তুই?”
না বলা কথা
নানা কথার ভীরে আসল কথাটি,
লুকিয়ে রয় মনের মাঝে,
অনুভবের সাথে খেলে তারা লুকোচুরি,
সময় ফুরিয়ে যাবার পরে।
পুঞ্জীভূত কথা ভেসে বেড়ায় আমনে সামনে,
যখন থাকি বসে নিরজনে একেলা,
মনে হয় শুনি কিছু জবাব কখনো,
এই যে আমার দিন রাতের খেলা।
স্মৃতি টুকুই আমার যে সম্বল,
মেঘলা দিনে পৃষ্ঠাগুলি খুলে খুলে দেখি,
ছবিখানি এখনো আছে উজ্জ্বল,
ভাবনাগুলি মনেই রেখে রাখি।
মা দিবসে
ধন্য এই মা দিবস,
একটু তো মনে পড়ল,
মা বলে একবার ডাক শুনতে,
তবে সত্যি বলতে কি জানিস,
আজ সকাল থেকে মনে হয়,
একদিনের জন্য আমাকে মাসি বলিস,
একদিনের জন্য চাই না কোনো চিন্তা,
মাথাতে ঘুর ঘুর করে যা সবসময়,
টিফিন কি হবে,দুধ আছে কি নেই,
কাজের মাসি এলো না বোধহয়,
রান্না কখন চাপাবো,আলু পেয়াজ নেই,
কাকে পাঠাই বাজারে,সবাই ঘুমোচ্ছে,
যাহ গ্যাস শেষ, সিলিন্ডার বদলাতে হবে,
ইস সোফা টা করে রেখেছে নোংরা,
কাগজ বই রেখেছে কে এলোমেলো,
কেমন আছে বয়স্ক মামা মামিরা,
একবার ফোন তো করতে পারত,
আজগুবী চিন্তাগুলি মাথায় ভীড় করে,
তাই তো বলি,
একদিনের জন্য আমায় দে রেহাই,
আমি আমার নিজের বুদবুদে থাকতে চাই,
মনে কর, আমি আজ তোদের আন্টি।।
খুশীর মেজাজ
ইশ্বর যেন একজন কচি শিশু,
সাবানের বুদবুদ তৈরি করায় ব্যাস্ত,
আমরা সবাই সেই বুদবুদ,
উড়ে বেড়াই এই ভূমিতে,
সবাইয়ের আলাদা আলাদা স্থান,
তবে কোনোটা ছোটো কেউ বড়,
কেউ গোল বলাকার মত,
কেউ বা একটু ডিম বা আপেলের মতন,
ভাসতে ভাসতে কেউ আবার আটকে পরে,
আর এক বুদবুদের সাথে,
উড়তে থাকে হাওয়ায়।
আলোর ঝলকানিতে তারা হয় রংগিন,
ইশ্বরের খুশীর বারতা পৌছে দেয়,
প্রকৃতির সব যায়গায়।
ফুটে গেলেও ক্ষতি কি,
আছে তো আরো অনেক
তারা তো আছে,
ছড়িয়ে দিতে হাল্কা খুশীর মেজাজ